Breaking News

লালন ফকিরের জীবন কেন্দ্রিক রচনা


••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
♣বিশ্ব সাহিত্যে প্রভাব :-
লালন ফকির একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। তিনি অসংখ্য গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। তার গানের মাধ্যমেই উনিশ শতকে বাউল গান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তাঁকে "বাউল সম্রাট" হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। তাঁর সবচেয়ে অবিকৃত তথ্যসূত্র তার নিজের রচিত ২৮৮টি গান।
♣নাটক :-
১) লালন সাঁইজির জীবনীর নির্ভরযোগ্য তথ্য ও লালন-দর্শনের মূল কথা নিয়ে সাইমন জাকারিয়া রচনা করেছেন "উত্তরলালনচরিত" শীর্ষক নাটক। নাটকটি ঢাকার "সদর প্রকাশনী" হতে প্রকাশিত হয়েছে। "উত্তরলালনচরিত" নাটকটি নাট্যকার ও বাউলসাধকদের সমন্বয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমন্ডলে উপস্থাপিত হয়েছে।
২) অভিনেতা, নির্দেশক ও নাট্যকার কল্যাণ মিত্র লালন ফকিরের জীবনী নিয়ে রচনা করেন "লালন ফকির" (১৯৭৭) নাটক। 
♦উপন্যাস :-
১) রণজিৎ কুমার, লালন ফকির সম্পর্কে "সেনবাউল রাজারাম" নামে একটি উপন্যাস রচনা করেন।
২) পরেশ ভট্টাচার্য, লালন ফকিরের জীবনী নিয়ে রচনা করেন "বাউল রাজার প্রেম" নামে একটি উপন্যাস।
৩) ভারতের বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ বসু ১৯৬৮ সালে লালন ফকিরের জীবনী নিয়ে রচনা করেন "কোথায় পাবো তারে" উপন্যাস।
৪) আরেক ভারতের বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ২০০৮ সালে লালন ফকিরের জীবনী নিয়ে রচনা করেন "মনের মানুষ" উপন্যাস। এই উপন্যাসে কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র ব্যতিরেকেই লালনকে হিন্দু কায়স্থ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, নাম দেওয়া হয়েছে লালন চন্দ্র কর।
৫) ১৯১০ সালে প্রকাশিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত উপন্যাস "গোরা" শুরু হয়েছে লালন ফকিরের গান "খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়" দিয়ে।
♦ছোটগল্প :-
১) ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে শিশুসাহিত্যিক সুনির্মল বসু "লালন ফকিরের ভিটে" নামে একটি ছোটগল্প রচনা করেন।
২) বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন দুই "মুসাফির নামের" একটি ছোটগল্প।
♠চলচ্চিত্র :-
লালন ফকিরের জীবনী নিয়ে কয়েকটি চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে।
১) লালন ফকিরের জীবনী নিয়ে ১৯৭২ সালে সৈয়দ হাসান ইমাম পরিচালনা করেন "লালন ফকির" চলচ্চিত্রটি।
২) লালন ফকিরের জীবনী নিয়ে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৮৬ সালে "লালন ফকির"-এই একই নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।
৩) ম. (মহম্মদ) হামিদ ১৯৮৮ সালে লালন ফকিরের জীবনী নিয়ে পরিচালনা করেন "তথ্যচিত্র দ্যাখে কয়জনা", যা বাংলাদেশে টেলিভিশনে প্রদর্শিত হয়।
৪) তানভীর মোকাম্মেল ১৯৯৬ সালে লালন ফকিরের জীবনী নিয়ে পরিচালনা করেন "তথ্যচিত্র অচিন পাখি"।
৫) ২০০৪ সালে তানভির মোকাম্মেলের পরিচালনায় "লালন" নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। এই চলচ্চিত্রটিতে লালন ফকিরের ভূমিকায় অভিনয় করেন রাইসুল ইসলাম আসাদ এবং এটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।
৬) ২০১০ সালে কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "মনের মানুষ" উপন্যাস অবলম্বনে গৌতম ঘোষ "মনের মানুষ" নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যা ২০১০ সালে ৪১তম ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে। উল্লেখ্য যে এই চলচ্চিত্রে লালন ফকিরকে কোন উল্লেখযোগ্য সূত্র ছাড়াই হিন্দু হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই চলচ্চিত্রটি অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হয়।
৭) এছাড়াও ২০১১ সালে মুক্তি পায় হাসিবুর রেজা কল্লোল পরিচালিত "অন্ধ নিরাঙ্গম" নামের চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রটিতে লালন ফকিরের দর্শন ও বাউলদের জীবনযাপন তুলে ধরা হয়েছে। এটিতে অভিনয় অভিনয় করেছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, রোকেয়া প্রাচী, আনুশেহ্ আনাদিল প্রমুখ।
♠কবিতা :-
১) মার্কিন কবি এলেন গিন্সবার্গ লালন ফকিরের দর্শনে প্রভাবিত হন এবং তার রচনাবলীতেও লালন ফকিরের রচনাশৈলীর অনুকরণ দেখা যায়। তিনি "After Lalon" নামে একটি কবিতাও রচনা করেন।
২) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, --- "তিনি লালনের আছে যার মনের মানুষ সে মনে"-এই গানে উল্লেখিত মনের মানুষ কে তা আবিষ্কার করতে পেরেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি একটি কবিতাও রচনা করেন। যার কথা ছিল --- "আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে, তাই হেরি তায় সকলখানে...."।     

No comments