♣কালীপ্রসন্ন সিংহের বিভিন্ন গ্রন্থের শ্রেণিবিভাগ♣
(২৩শে ফেব্রুয়ারি, ১৮৪০ ; মতান্তরে, ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ১৮৪১ --- ২৪শে জুলাই, ১৮৭০)
তিনি দু'ই শ্রেণির সাহিত্য রচনা করেছেন। একশ্রেণির সাহিত্য হল
অনুবাদমূলক, যার মধ্যে "মহাভারতের অনুবাদ", "গীতার অনুবাদ" উল্লেখযোগ্য।
অপর শ্রেণির সাহিত্য হল তাঁর মৌলিক সৃষ্টি। তাঁর এই মৌলিক সৃষ্টি দুটি
শ্রেণিতে বিভক্ত। যথা ---
(ক) নাটক ও প্রহসন জাতীয় রচনা :-
তাঁর লেখা তিনটি মৌলিক নাটক হল ---
(১) "বিক্রমোর্বশী নাটক" (১৮৫৭)
(২) "সাবিত্রী সত্যবান নাটক" (১৮৫৮)
(৩) "মালতীমাধব নাটক" (১৮৫৯)
তাঁর লেখা তিনটি মৌলিক নাটক হল ---
(১) "বিক্রমোর্বশী নাটক" (১৮৫৭)
(২) "সাবিত্রী সত্যবান নাটক" (১৮৫৮)
(৩) "মালতীমাধব নাটক" (১৮৫৯)
★তাঁর লেখা একটি প্রহসন হল --- "বাবুনাটক" (১৮৫৪) : এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম প্রহসনধর্মী রচনা।
(খ) মৌলিক গদ্যরচনা :-
তাঁর লেখা মৌলিক গদ্যরচনা হল --- "হুতোম প্যাঁচার নকশা" (প্রথম খণ্ড : ১৮৬১ এবং দ্বিতীয় খণ্ড : ১৮৬২)।
তাঁর লেখা মৌলিক গদ্যরচনা হল --- "হুতোম প্যাঁচার নকশা" (প্রথম খণ্ড : ১৮৬১ এবং দ্বিতীয় খণ্ড : ১৮৬২)।
★আধুনিক অনেক পণ্ডিত নীচের গ্রন্থ দুটিকে কালীপ্রসন্ন সিংহের রচনা বলে মনে করেছেন। সেগুলি হল ---
(১) "কলকাতার হাটহদ্দ"
(২) "বাবুদের দুর্গোৎসব"
(১) "কলকাতার হাটহদ্দ"
(২) "বাবুদের দুর্গোৎসব"
♦♦অনুবাদ মূলক গদ্য রচনা :-
★★"পুরাণ সংগ্রহ" বা "কালীসিংহের মহাভারত" (মহাভারত অনুবাদ, ১৮৫৮-৬৬) :-
কালীপ্রসন্ন সিংহ বিভিন্ন পণ্ডিতদের সাহায্য নিয়ে ১৮৫৮
খ্রিস্টাব্দে গদ্যে "মহাভারতের অনুবাদ" রচনায় হাত দেন। কালীপ্রসন্নের
সবথেকে বড় কীর্তি হল, তাঁর সম্পাদনায়, আঠারো পর্ব মহাভারত গদ্য আকারে
বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে, যা এখনও ব্যাপকভাবে পঠিত এবং প্রকাশিত হয়।
পুরো প্রকল্পটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দ্বারা পরিদর্শিত হয়। এই অনুবাদটি
১৮৫৮ থেকে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের ভিতরে প্রকাশিত হয়েছিল। সমগ্র অনুবাদকরণ
প্রক্রিয়াটি উত্তর কলকাতার বরানগরে অবস্থিত সারস্বতাশ্রম নামে একটি
বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছিল। কালীপ্রসন্ন বিনামূল্যে মহাভারত বিতরণ করেছিলেন।
কালীপ্রসন্ন এই বিপুল খরচ বহন করতে তাঁর বিভিন্ন মহল অর্থাত্ নিজস্ব
মালিকানাধীন জমি বিক্রয় করে দিয়েছিলেন। তিনি ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ "শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা"-এর অনুবাদও করেছিলেন, যা তাঁর
মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়। মহাভারত অনুবাদের প্রাঞ্জল সাধু গদ্য প্রশংসার
দাবি রাখে।
★তাঁর অনুবাদ নাটক রচনার প্রেরণা বা তাগিদ এসেছিল ১৮৫৬
খ্রিস্টাব্দে "বিদ্যোৎসাহিনী মঞ্চ" (রঙ্গমঞ্চ) থেকে। সমাজের বৈষয়িক
অবস্থার সঙ্গে রঙ্গমঞ্চের বিলুপ্তি বা পুনরাবির্ভাবের ইতিহাসটি মিলিয়ে
দেখলেই তা বোঝা যায়।
★গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি জানিয়েছেন, --- "যাহাতে এদেশীয় লোকে
অতীব আদরণীয় ভারতগ্রন্থের সমস্ত অর্থ প্রকৃতরূপে অবগত হইয়া সুখী হইতে পারেন
এবং যাহাতে ভারতবর্ষের গৌরবস্বরূপ মহাভারতের অবশ্যম্ভাবী মর্য্যাদা চিরদিন
বর্তমান থাকে তাহার উপযুক্ত উপায় নির্ধারণ করিবার উদ্দেশ্যে আমি এই
দুঃসাধ্য-চিরসঙ্কল্পিত ব্রতে ব্রতী হইয়াছি।"
কালীপ্রসন্ন সিংহের মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়
গীতার অনুবাদ "শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা" (১৯০২)। মহাভারতের মতো গীতাও সংস্কৃতগন্ধী
গুরুগম্ভীর সাধু গদ্যে রচিত।
★গ্রন্থের ভূমিকায় লেখক জানিয়েছেন, --- "ভাগবদ্গীতা পাঠ করিলে
পূর্বপুরুষদিগের বিদ্যাবুদ্ধি স্মরণ করিয়া আহ্লাদে পরিপূর্ণ হইতে হয়। কত
শতাব্দী অতীত হইল ভগবদ্গীতা প্রকাশিত হইয়াছে ; কিন্তু ইহার অধিকাংশ মতের
সহিত অধুনাতন বিখ্যাত অন্বিক্ষিকী ও ত্রয়ী বেদাদিগের মতের ঐক্য দেখিতে
পাওয়া যায়।"
★তিনি তাঁর রচিত "পুরাণ সংগ্রহ" বা "কালীসিংহের মহাভারত"
(সংস্কৃত থেকে বাংলায় মহাভারত অনুবাদ, ১৮৫৮-৬৬) অনুবাদটি মহারানী
ভিক্টোরিয়া-কে উত্সর্গ করেছিলেন।
♠♠মৌলিক গদ্যরচনা :-
★★"হুতোম প্যাঁচার নকশা" (১ম খণ্ড : ১৮৬১ এবং ২য় খণ্ড : ১৮৬২) :-
কালীপ্রসন্ন সিংহের কৃতিত্ব অনুবাদ মূলক গদ্য রচনায় নয়, মৌলিক গদ্য রচনা "হুতোম প্যাঁচার নকশা" (প্রথম খণ্ড : ১৮৬১ এবং দ্বিতীয় খণ্ড : ১৮৬২) রচনায়। এই সামাজিক নকশায় আছে হাস্যরস এবং ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। উনিশ শতকের কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী শহরতলীর কলুষ-কালিমা লিপ্ত জীবন-চিত্র, বিভিন্নরকম উৎসবাদির বর্ণনা, খ্রিস্টান হওয়ার হিড়িক, দুর্গাপূজার বর্ণনা, যুবসমাজের ভ্রষ্টাচার, উচ্ছৃঙ্খল জীবনাচার কৌতুকের সঙ্গে বর্ণনা করেছেন লেখক। সমাজে তখন গুরুত্ব লাভ করেছে অর্থ কৌলীন্য। গ্রাম জীবনের চির প্রচলিত জীবন-যাত্রা ভেঙে পড়েছে। চলমান অর্থনীতির সুযোগে প্রচুর উপার্জন করে অনেকেই ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। বনেদী সব জমিদারদের জমিদারি অনেকেই কিনে নিলো। সময়ের এই চিত্র হুতোমের কলমে যথাযথভাবে পরিস্ফুট হয়েছে --- "নবাবী আমল শীতকালের সূর্যের মতো অস্ত গ্যালো। মেঘান্তের রৌদ্রের মতো ইংরেজের প্রতাপ বেড়ে উঠলো। বড়ো বড়ো বাঁশ ঝাড় সমূলে উচ্ছন্ন হল। কঞ্চিতেও বংশলোচন জন্মাতে লাগলো নবো মুনসী, ছিরে বেনে ও পুঁটে তেলি রাজা হল। সেপাই পাহারা, অসাসোটা ও রাজা খেতাপ ইণ্ডিয়া রবারের জুতো ও শান্তিপুরের ডুরে উড়ুনির মতো রাস্তায়, পাদাড়ে ও বাদাড়ে গড়াগড়ি যেতে লাগলো। কৃষ্ণচন্দ্র, রাজবল্লভ, মানসিংহ, নন্দকুমার, জগৎশেঠ প্রভৃতি বড়ো বড়ো ঘর উৎসন্ন যেতে লাগলো, তাই দেখে হিন্দুধর্ম, কবির গান, বিদ্যার উৎসাহ, পরোপকার ও নাটকের অভিনয় দেশ থেকে ছুটে পালালো।.....রামা মুদ্দোফরাস, কেষ্টা বাগদি, পেঁচো মল্লিক ও ছুঁচো শীল কলকেতার কায়েত বামুনের মুরুব্বী ও সহরের প্রধান হয়ে উঠলো।"
কালীপ্রসন্ন সিংহের কৃতিত্ব অনুবাদ মূলক গদ্য রচনায় নয়, মৌলিক গদ্য রচনা "হুতোম প্যাঁচার নকশা" (প্রথম খণ্ড : ১৮৬১ এবং দ্বিতীয় খণ্ড : ১৮৬২) রচনায়। এই সামাজিক নকশায় আছে হাস্যরস এবং ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। উনিশ শতকের কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী শহরতলীর কলুষ-কালিমা লিপ্ত জীবন-চিত্র, বিভিন্নরকম উৎসবাদির বর্ণনা, খ্রিস্টান হওয়ার হিড়িক, দুর্গাপূজার বর্ণনা, যুবসমাজের ভ্রষ্টাচার, উচ্ছৃঙ্খল জীবনাচার কৌতুকের সঙ্গে বর্ণনা করেছেন লেখক। সমাজে তখন গুরুত্ব লাভ করেছে অর্থ কৌলীন্য। গ্রাম জীবনের চির প্রচলিত জীবন-যাত্রা ভেঙে পড়েছে। চলমান অর্থনীতির সুযোগে প্রচুর উপার্জন করে অনেকেই ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। বনেদী সব জমিদারদের জমিদারি অনেকেই কিনে নিলো। সময়ের এই চিত্র হুতোমের কলমে যথাযথভাবে পরিস্ফুট হয়েছে --- "নবাবী আমল শীতকালের সূর্যের মতো অস্ত গ্যালো। মেঘান্তের রৌদ্রের মতো ইংরেজের প্রতাপ বেড়ে উঠলো। বড়ো বড়ো বাঁশ ঝাড় সমূলে উচ্ছন্ন হল। কঞ্চিতেও বংশলোচন জন্মাতে লাগলো নবো মুনসী, ছিরে বেনে ও পুঁটে তেলি রাজা হল। সেপাই পাহারা, অসাসোটা ও রাজা খেতাপ ইণ্ডিয়া রবারের জুতো ও শান্তিপুরের ডুরে উড়ুনির মতো রাস্তায়, পাদাড়ে ও বাদাড়ে গড়াগড়ি যেতে লাগলো। কৃষ্ণচন্দ্র, রাজবল্লভ, মানসিংহ, নন্দকুমার, জগৎশেঠ প্রভৃতি বড়ো বড়ো ঘর উৎসন্ন যেতে লাগলো, তাই দেখে হিন্দুধর্ম, কবির গান, বিদ্যার উৎসাহ, পরোপকার ও নাটকের অভিনয় দেশ থেকে ছুটে পালালো।.....রামা মুদ্দোফরাস, কেষ্টা বাগদি, পেঁচো মল্লিক ও ছুঁচো শীল কলকেতার কায়েত বামুনের মুরুব্বী ও সহরের প্রধান হয়ে উঠলো।"
★সমাজের আধিপত্য নিয়ে বনেদী আর নবোদ্ভূতদের মধ্যে যে লড়াই
শুরু হয়েছিল, ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর সমর্থন ছিল নবোদ্ভূতদের প্রতিই।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পুরানো সামন্ততন্ত্রকে ধ্বংস করলো, নতুন বণিকতন্ত্রের
উদ্ভব ঘটলো। হুতোমের "ফুলবাবু" চরিত্রটি তারই প্রতিনিধি।
♥♥অন্যান্য কয়েকটি গ্রন্থ :-
১) "হিন্দু পেট্রিয়ট সম্পাদক মৃত হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের স্মরণার্থ কোনো বিশেষ চিহ্ন স্থাপন জন্য বঙ্গবাসিবর্গের প্রতি নিবেদন" (১৮৬১)
২) "পুরাণ সংগ্রহ" বা "কালীসিংহের মহাভারত" (মহাভারতের অনুবাদ : ১৮৫৮-৬৬)
৩) "বঙ্গেশ বিজয়" (১৮৬৮)
১) "হিন্দু পেট্রিয়ট সম্পাদক মৃত হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের স্মরণার্থ কোনো বিশেষ চিহ্ন স্থাপন জন্য বঙ্গবাসিবর্গের প্রতি নিবেদন" (১৮৬১)
২) "পুরাণ সংগ্রহ" বা "কালীসিংহের মহাভারত" (মহাভারতের অনুবাদ : ১৮৫৮-৬৬)
৩) "বঙ্গেশ বিজয়" (১৮৬৮)
No comments