Breaking News

কবিতা সিংহ : 'সপ্তদশ অশ্বারোহী'র কবি

🙏কবিতা সিংহ : 'সপ্তদশ অশ্বারোহী'র কবি🙏
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
(১৬ই অক্টোবর, ১৯৩১ --- ১৫ই, অক্টোবর ১৯৯৮)
কবিতা সিংহ (১৯৩১-১৯৯৮) একজন বাঙ্গালী কবি, ঔপন্যাসিক ও গল্পকার। জীবিকাসূত্রে তিনি ছিলেন একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে সক্রিয় এই কবি-সাংবাদিক ছিলেন আধুনিক কর্মজীবী সৃজনশীল নারীর মডেল। তিনি ছিলেন একজন নারীবাদী লেখিকা এবং বাংলায় নারীবাদী রচনার অন্যতম স্রষ্টা।
Image result for কবিতা সিংহ
💙¤ জন্ম ও জন্মস্থান :-
কবিতা সিংহ ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ভবানীপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
💚¤ পিতা-মাতা :-
পিতা --- শৈলেন্দ্র সিংহ।
মাতা --- অন্নপূর্ণা সিংহ।
💛¤ পারিবারিক জীবন/বংশপরিচয় ও তাঁর জীবনে মা'র প্রভাব :-
                     ছয়-সাত বছর বয়স থেকেই কবিতা সিংহ লিখতে আরম্ভ করেন। তাঁর থেকে মাত্র পনেরো বছরের বড়ো, তাঁর মা অন্নপূর্ণা সিংহকে কবিতা লিখতে দেখতেন তিনি। মা অন্নপূর্ণা সিংহের অনুপ্রেরণাতে কৈশোরেই তাঁর কবিতা লেখা আর ছবি অাঁকতে শেখা। কিন্তু মায়ের মতো পিয়ানো এবং অর্গান বাজাতে শেখেননি তিনি। বাবা শৈলেন্দ্র সিংহ সেতার বাজাতেন। তা-ও শেখা হয়ে ওঠেনি তাঁর। মায়ের উৎসাহে নাচ শেখেন কবিতা। ষোলো বছর বয়স পর্যন্ত তিনি নাচ শিখেছিলেন। কবিতা সিংহ মনে করতেন, নাচ আর ছবি আঁকাই তাঁর জীবনে দান করেছে ছন্দ আর বর্ণ। দিয়েছে শরীরের স্ফূর্তি, স্বাধীন বিকাশের আনন্দ। কবিতার জীবনের অনেকখানি, বোধহয় সবখানি জুড়েই ভাস্বর হয়ে ছিল তাঁর মায়ের ছবি, তাঁর জীবনে যার সবথেকে বেশি প্রভাব ছিল।
💜¤ সাহিত্যজগতে আত্মপ্রকাশ :-
কবিতা সিংহের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় মাত্র পনেরো বছর বয়সে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে। এই কবিতাটি প্রকাশিত হয় ইংরেজি "নেশন" ("Nation") পত্রিকায়। এটি ছিল তার ইংরেজি কবিতা। সেটি সম্ভবত একটি ইংরেজি কবিতা। এই পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্যজগতে আত্মপ্রকাশ করেন।
💝¤ বিবাহিত জীবন/দাম্পত্য জীবন :-
মাত্র কুড়ি বছর বয়সে সহপাঠী বিমল রায় চৌধুরীকে বিয়ে করেন কবিতা সিংহ।
💙¤ সন্তান :-
তিনি ছিলেন তিন সমত্মানের জননী। দুই মেয়ে  রাজেশ্বরী ও পরমেশ্বরী এবং ছেলে কনাদ রায়চৌধুরী।
💚¤ ছদ্মনাম :-
তিনি মাত্র একটি ছদ্মনামেই তাঁর সাহিত্য রচনা করতেন। সেটি হল --- "সুলতানা চৌধুরী"।
💛¤ কর্মজীবন :-
তিনি আকাশবাণীর "শ্রবণী" অনুষ্ঠানের প্রোডিউসার হিসেবে কাজ করেছেন। শুধুমাত্র কবি হিসাবেই যে তার খ্যাতি ছিল তা নয় তিনি আকাশবানী কলকাতা কেন্দ্রে বাংলা কথিকা বিভাগের সহকারী প্রযোজিকা হিসাবে যোগ দেন এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
💜¤ সাহিত্যকর্ম :-
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে কবিতা সিংহের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। এক এক দশকের ব্যবধানে তাঁর কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে "সহজ সুন্দরী", ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে "কবিতা পরমেশ্বরী", ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে "হরিণাবৈরী", নব্বই-এর দশকের শেষপ্রান্তে শেষ কাব্যগ্রন্থ "বিমল হাওয়ার হাত ধরে" প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা লেখার বাইরে তিনি বেশকিছু ছোটগল্প এবং উপন্যাস রচনা করেন, যদিও সেগুলি তেমন শিল্প মাধুর্য সৃষ্টি করতে পারেনি।
[কবিতা সিংহ, (সম্পাদকের প্রশ্নের উত্তর দেন কবিতা সিংহ), স্বনির্বাচিত। কাব্য জীবন : কবিতা-সংকলন গ্রন্থ, ১৯৭০] ষোলো বছর বয়সে "আনন্দবাজার পত্রিকা"য় কবিতা সিংহ লেখেন "আর্ট ও নারী"। বিজ্ঞাপনে নারীশরীরের ব্যবহার নিয়ে তিনি লিখেছিলেন এই লেখাটি। এর বেশ কয়েক বছর পরে তেইশ থেকে পঁচিশ বছর বয়স পর্যন্ত এক বিখ্যাত ইংরেজি চলচ্চিত্র সাপ্তাহিক সিনে অ্যাডভান্সের মেয়েদের পাতা সম্পাদনা করতেন তিনি। তখন তাঁর কাজ ছিল উঠতি চিত্রতারকাদের গস্ন্যামারাস ফটোগ্রাফসমেত প্রতি সপ্তাহে একটি করে চটকদার রচনা লেখা।
💝¤ কাব্যকৃতি :-
মূলত কবিতা রচনার মধ্য দিয়েই তিনি নিজের কবিসত্তার প্রকাশ ঘটান। কবিতা সিংহের কাব্যের কোনো ঈশ্বর নেই, আছেন ঈশ্বরী। তিনি একা। নারী এবং কবিতাকে একইসঙ্গে মিলিয়ে দেন কবিতা সিংহ। কাব্যের দেবী কবিকে দেখিয়ে দেন কবিতার অবয়ব। নারীর গর্ভধারণ এবং কবিতার জন্ম হওয়া কোথাও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় কবির
কাছে। কবিতা যখন কবির কাছে আসে, তখন কবি যেমন অনেক কিছু পান, তেমনি জীবনের সাধারণ- স্বাভাবিক অনেক কিছু ছাড়তে হয় তাঁকে। তাঁকে পেতে হয় নির্বাসন। তেমনি মেয়েরা যখন প্রাবল্য ধারণ করে, উন্নতির শিখরে উঠে চলে, তখনই
তাঁকে মনে করা হয় অশুভের প্রতীক। জ্ঞান- বুদ্ধির শক্তি থেকে বিযুক্ত করা হয় তাকে। আর তাই "ঈশ্বরী কাব্যের যিনি, সাকার তমসা তিনি/ তিনি ঘোর অমা!"
★তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে, তাঁর চিন্তা-চেতনা, জীবন দর্শন এবং ভাবনাভঙ্গী সমসময়ের থেকে অনেকখানি এগিয়ে ছিল। তাঁর স্বরে ও বক্তব্যে প্রতিধ্বনিত হতো সুগভীর আত্মপ্রত্যয়। সমাজের একপার্শ্বিকতাকে ভেঙে তিনি নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন ব্যক্ত করেছেন। তাঁর কবিতার পঙ্ক্তিতে পঙ্ক্তিতে আত্ম-অন্বেষণের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে।
💙¤ গ্রন্থপঞ্জী :-
💚¤ কাব্যগ্রন্থ :-
কবিতা সিংহ নারী স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন করেছেন, কবিতা লিখেছেন। তাঁর কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৪টি ও কাব্য-সংকলন গ্রন্থের সংখ্যা ১টি।
👆কবিতা সিংহের ৪টি কাব্যগ্রন্থ হল ---
১) "সহজ সুন্দরী" (১৯৬৫)
★প্রকাশক :- বিমল রায়চৌধুরী।
★প্রকাশনা :- "মডার্ন ইন্ডিয়া" প্রকাশনী।
২) "সপ্তদশ অশ্বারোহী" (১৯৭৮)
৩) "হরিণাবৈরী" (১৯৮৫)
৪) "বিমল হাওয়ার হাত ধরে"
👆কবিতা সিংহের ১টি কাব্য-সংকলন গ্রন্থ হল ---
১) কবিতা সিংহের "শ্রেষ্ঠ কবিতা" (১৯৮৭)
★তথ্য :- ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় কবিতা সিংহের "শ্রেষ্ঠ কবিতা"। তিনটি কাব্যগ্রন্থ থেকে কবি তাঁর প্রিয়তম কবিতাগুলিকে চয়ন করেছেন শ্রেষ্ঠ কবিতায়। তার সঙ্গে যুক্ত করেছেন তখনো প্রকাশিত না-হওয়া কাব্যগ্রন্থ "বিমল হাওয়ার হাত ধরে", এর কতকগুলি কবিতা এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিবেদিত শত কবিতা -- রবীন্দ্রনাথের নামের কয়েকটি কবিতা।
💛¤ উল্লেখযোগ্য কবিতা :-
১) "সহজ সুন্দরী"    
২) "অপমানের জন্য ফিরে আসি"    
৩) "আছেন ঈশ্বরী"      
৪) "ভাঙ্গী রমণীর ক্রোধে" 
৫) "নিমকাঠ"    
৬) "কালো ঘোড়া"    
৭) "মরণ"    
৮) "গর্জন সত্তর"      
৯) "আজীবন পাথর-প্রতিমা"  
১০) "সূর্যস্পশ্যা"   
১১) "কবিতা এবং আমি"    
১২) "রাত্রি আমার কবিতা"    
১৩) "বিবিকে ফুল মার্কস"     
১৪) "ঈশ্বর! ঈশ্বর!"  
১৫) "ভ্রূণা"      
১৬) "আকাশ"    
১৭) "বৃদ্ধ বেশ্যা তপস্বিনী"     
১৮) "আলাত-পুরুষ"   
১৯) "কোনো এক কূপমন্ডূকের উক্তি"   
২০) "ব্যালেরিনা"
২১) "ইচ্ছাময়ীর ইচ্ছা হলে"
২২) "দিন"
২৩) "কবিতা"
২৪) "বিসর্জনের পর"
💜¤ কথাসাহিত্য :-
আধুনিক মহিলা কথাসাহিত্যিক হিসাবে কবিতা সিংহের একটি বিশেষ স্থান আছে। ব্যক্তি জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা থেকে উঠে এসেছে তাঁর কথাসাহিত্য। তিনি কবিতার সাথে সাথে উপন্যাস এবং ছোটগল্পও রচনা করেছেন। উপন্যাসের পাশাপাশি তিনি ছোটগল্পকার হিসাবেও খ্যাতি লাভ করেন।
💝¤ উপন্যাস :-
কবিতার পাশাপাশি উপন্যাসেও কবিতা সিংহ তুলে ধরেছেন অসাম্যের প্রতিস্পর্ধী স্বর। পাঁচের দশকেই তাঁর উপন্যাস লেখার সূচনা। বাংলা উপন্যাসের ধারায় অন্যতম গুরম্নত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী রচনাকার কবিতা সিংহ। তাঁর বক্তব্য ও প্রকাশভঙ্গি অননুকরণীয়। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল ---
১) "সলিল সীতা" (১৯৫৪)
★তথ্য :- তাঁর প্রথম উপন্যাস "সলিল সীতা" প্রকাশিত হয় ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে। এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক যাতে আধুনিক দাম্পত্য জীবনের জটিলতা নিয়ে অভূতপূর্ব দৃষ্টিপাত রয়েছে।
২) "ছমিরণ"
★তথ্য :- এই উপন্যাসটি ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে লেখা হয়। উপন্যাসটির নাম খুব কম পাঠকই জানেন। এরপর বেশ কিছু উপন্যাস লিখেছেন কবিতা সিংহ। সব কটি বই-আকারে প্রকাশিত হয়নি। যে-কটি পেয়েছে, সেগুলোও অত্যমত্ম দুর্লভ। বেশিরভাগই অতি অযত্নে রক্ষিত।
৩) "সোনারূপার কাঠি" (১৯৫৬)
৪) "পাপপুণ্য পেরিয়ে" (১৯৬৪)
★তথ্য :- "পাপপুণ্য পেরিয়ে" (১৯৬৪) উপন্যাসে বাসনা বলে, --- "মেয়েদের পুরুষরা নিজেদের ব্যবসায়ে কিভাবে ব্যবহার করে এ নিয়ে ধোঁয়া উঠছে এমন প্রবন্ধ লিখেছিলাম ষোল বছর বয়সে। এখন আমি হচ্ছি মেয়েদের এক্সপস্নয়েট করার ষড়যন্ত্রের অন্যতম অংশীদার। আমি নিজের মাংস নিজের কাঁধে বয়ে নিয়ে যাচ্ছি। নিজের মাংস।" কবিতা সিংহের লেখক জীবন ও ব্যক্তিগত জীবন কোথাও যেন এখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
৫) "মরমা" (১৯৬৭)
৬) "খুনের সংখ্যা এক" (১৯৭০)
৭) "চারজন রাগী যুবতী" (১৯৭৩)
৮) "কবিতা পরমেশ্বরী" (১৯৭৬)
৯) "পতনের বিরুদ্ধে" (১৯৭৮)
১০) "নায়িকা প্রতিনায়িকা" (১৯৭৯)
১১) "বাঁচার জন্য নির্বাচিত" (১৯৮৩)
১২) "পৌরুষ" (১৯৮৪)
১৩) "মোমের তাজমহল" (১৯৮৯)
★তথ্য :- নারী-বঞ্চনার ইতিহাসকে তুলে আনেন তিনি তাঁর "মোমের তাজমহল" (১৯৮৯) উপন্যাসে। সেখানে উনিশ শতকের এক পতিতা অনায়াসে তাঁর "বাঁধাবাবু" অঘোরকৃষ্ণকে বলতে পারে -- "আজ বুঝলাম আমি নয়, আপনি আমার যোগ্য হয়ে ওঠেননি রাজাবাবু।"
১৪) "রক্তাক্ত গম্বুজ" (১৯৯৪)
★তথ্য :- "রক্তাক্ত গম্বুজ" (১৯৯৪) উপন্যাসে টিভি চ্যানেলের পদস্থ কর্মচারী দেবী মিত্র তাঁর বিদেশি বান্ধবীকে চিঠিতে লেখেন, --- "আমি পৃথিবীর এমন একটা জায়গা থেকে কথা বলছি, সেখানে তোমাদের ওই ফেমিনিস্ট আন্দোলনকেও একটা অদরকারী বিলাস মনে হবে। আগে তো মানুষের পর্যায়ে আসুক মেয়েরা, অবোলা পশুত্ব থেকে, আমি এমন একটা জায়গা থেকে কথা বলছি যেখানে মেয়েদের মুখের ভিতর সত্যিকার জিভ নেই, কনুয়ের পরে সত্যিকার হাত নেই, হাঁটুর পরে সত্যিকারের পা নেই। এমনকি মাথার খুলির মধ্যেও সত্যিকার মসিত্মষ্ক নেই। আগে সেগুলোর ব্যবস্থা হোক, তারপর অন্য অধিকারের ব্যবস্থা হবে।"
💙¤ গল্পগ্রন্থ ও গল্প-সংকলন গ্রন্থ :-
কবিতা সিংহের গল্পগ্রন্থের সংখ্যা ৩টি ও গল্প-সংকলন গ্রন্থের সংখ্যা ১টি। তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয় ১টি গল্পগ্রন্থ ও ১টি গল্প-সংকলন গ্রন্থ এবং মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় ২টি গল্পগ্রন্থ।
★কবিতা সিংহের জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয় ১টি গল্পগ্রন্থ ও ১টি গল্প-সংকলন গ্রন্থ হল ---
১) কবিতা সিংহের "শ্রেষ্ঠ গল্প" প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে।
২) এরপর ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে বেরোয় তাঁর গল্প-সংকলন গ্রন্থ "একদিন আশালতা"।
★সম্প্রতি, অর্থাৎ কবিতা সিংহের মৃত্যুর পর প্রকাশিত ২টি গল্পগ্রন্থ হল ---
১) কবিতা সিংহের "পঞ্চাশটি গল্প" (জানুয়ারি, ২০১৩)।
২) কবিতা সিংহের "শ্রেষ্ঠ গল্প" (জানুয়ারি, ২০১৩)।
১) "শ্রেষ্ঠ গল্প" (১৯৮৪) [গল্পগ্রন্থ]
★তথ্য :- কবিতা সিংহের "শ্রেষ্ঠ গল্প" (১৯৮৪) গল্পগ্রন্থের ভূমিকায় সমরেশ বসু লিখেছেন, --- ক্রোধ যে কেবলমাত্র একটা ভঙ্গিমাত্র না, ক্রুদ্ধ যুবতীদের কথা লিখতে গেলে যে কেবল বিকৃত অভিব্যক্তি প্রকাশের দ্বারা ফুঁসে ওঠা বোঝায় না, মাত্রাহীন অশ্রাব্য এবং ভুলে ভরা শব্দ ও বাক্য বিন্যাসের অযথা জটিলতার প্রশ্রয় দেওয়া না, বাংলা গল্পের নতুন চরিত্রদের আমাদের সামনে উপস্থিত করতে গিয়ে, তিনি, অনায়াসেই পাঠকদের তা বুঝিয়ে দেন। স্বাভাবিক। কারণ, ক্রোধের গভীরে যে অপমান, লাঞ্ছনা, বেদনা অমত্মর্নিহিত রয়েছে, সেই মর্মামিত্মক সত্য সন্ধানই তাঁকে কথাশিল্পী করে তুলেছে।" [সমরেশ বসু, "একজন পাঠকের কথা", কবিতা সিংহের শ্রেষ্ঠ গল্প, ১৯৮৪, "প্রমা প্রকাশনী"।]
২) "একদিন আশালতা" (১৯৮৮) [গল্প-সংকলন গ্রন্থ]
৩) "পঞ্চাশটি গল্প" (জানুয়ারি, ২০১৩) [গল্পগ্রন্থ]
৪) "শ্রেষ্ঠ গল্প" (জানুয়ারি, ২০১৩) [গল্পগ্রন্থ]
💚¤ বিদেশ ভ্রমণ :-
আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের প্রথম মহিলা অধিকর্তা হন কবিতা। রেডিও সূত্রেই প্রথমবার বিদেশ যাত্রা করেন তিনি। বেতারে উচ্চতর কুশলতার জন্য ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি পূর্ব জার্মানিতে গিয়েছিলেন। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখক ওয়ার্কশপের আমত্মর্জাতিক সম্মেলনে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। পশ্চিম জার্মানির "ফ্রাঙ্কফুর্ট বুক ফেয়ার"-এ ভারত উৎসবের সময় আমন্ত্রিত হয়েছিলেন কবিতা সিংহ। পরে বহুবার আমেরিকায় যান কবিতা। তাঁর ছোট মেয়ে পরমেশ্বরী আমেরিকার বস্টনে থাকেন।
💛¤ তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য :-
১) অধ্যাপিকা ও লেখিকা মঞ্জুশ্রী সেন সান্যাল "কবিতা সিংহের কবিতা" প্রবন্ধে লিখেছেন, --- "পঞ্চাশের দশকে নারী মাধুর্যের মোহাঞ্জন মুছে ফেলে সত্যেরপরাক্রমী উচ্চারণে পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে দৃঢ় দ্রোহ নিয়ে কবিতার মঞ্চে যিনি আলোড়ন সৃষ্টি করলেন তিনিই কবিতা সিংহ। তাঁর এই প্রতিবাদমুখর কণ্ঠস্বর সেই যুগের কাব্যভূমিতে ছিল এক ব্যতিক্রমী নিদর্শন। তিনিই সেই প্রথমা যিনি পুরুষসর্বস্ব জগৎকে প্রত্যাখ্যান করে গড়ে তুললেন এক ঈপ্সিত জগতের বিকল্প ছবি, সমাজনির্দিষ্ট কোনো আদর্শায়িত ভূমিকার বাইরে দাঁড়িয়ে তৈরি করেন নারীর এক নিজস্ব সমৃদ্ধ কারা-ভুবন।" ("কবি সম্মেলন")।
২) সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেনের মন্তব্যও প্রতিধন্যযোগ্য। তিনি বলেছেন, --- "কবিতা সিংহ যে সকল দিক থেকে একমেবদ্বিতীয়ম, বাংলা সাহিত্যে তাঁর কোনো তুলনা নেই। আজকের নারীবাদিনীদের চেয়ে অনেক ক্লেশ বেশি পথ হাঁটতে হয়েছিল তাঁকে। আর এগিয়ে ছিলেন যোজন যোজন বেশি।" ("একান্তর" --- জানুয়ারি, ১৯৯৯)।
                
💜¤ কবিতা-সমালোচনা :-
১) "নারীর যন্ত্রণার চিত্র" তাঁর কবিতায় আমরা বারে বারে পাই, ---
      "তুমি কি জানবে নারী কিভাবে শরীরে তার
      ঘোরায় সিন্দুর স্রোত, রক্তগুঁড়া-রজস্বলা দিন?
       নিখুঁত বানায়ে ভাঙে, নিজেদের সৃজিত প্রাণ
       নিজ অভ্যন্তরে।
       তুমি কি জানবে নারী আপনার সঙ্গে অঙ্গে কত
       সম্মানিত!" ("ইচ্ছাময়ীর ইচ্ছা হলে"/"কবিতা
                                                            পরমেশ্বরী")
২) কবিতা সিংহের কবিতায় প্রতিবাদী মেয়ের কণ্ঠস্বর বারে বারেই ধ্বনিত হয়। কবিতা সিংহের কবিতায় শোনা যায় সমাজের নানাধরনের পীড়নের বিরুদ্ধে স্বর। যেমন – দলিত সত্তার প্রতি অবিচারের প্রতিস্পর্ধী স্বর, যৌনতার রাজনীতি-অভিসন্ধির প্রত্যুত্তর, শ্রেণিবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্বর। সমাজের নারী-পুরষের বৈষম্যের বিপক্ষে প্রতিবাদ স্পষ্টভাবে বলতে পারেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি দেখান – দলিত সমাজের মেয়েদের কীভাবে পুরুষদের থেকে দ্বিগুণ বেশি যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। শ্রেণি এবং লিঙ্গ – দুটি পরিচয়ই তাদের রক্তমজ্জায় সঞ্চারিত করে দেয় অশৌচ, জীবনের সহজ, স্বাভাবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত তারা। তাদের চাওয়া-পাওয়া – সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হয় তথাকথিত উচ্চবর্ণের মানুষের দ্বারা। তারা বোঝে – "নিজের আজন্ম পাপ জন্ম অস্পৃশ্যতা।"
৩) কণ্যা ভ্রূণ নষ্ট করা নিয়েও তিনি প্রতিবাদ জানান। তিনি লেখেন, ---
"আমরা ভ্রূণ না ভ্রূণা/জন্ম দিও না মা/মা আমার জেনে শুনে কখনো উদরে/ধরো না এ বৃথা মাংস।"
৪) কবিতা সিংহের কবিতায় প্রতিবাদী মেয়ের কণ্ঠস্বর বারে বারে খুঁজে পাই। পুরুষের পাশে "নিশ্চিত পুতুল" প্রতিমা হওয়াকে তিনি ঘৃণা করেছেন। আধুনিক যান্ত্রিক সময়ের আর্তনাদ আমরা শুনেছি "হরিণাবৈরী" কবিতায়, যার উৎস চর্যাকার ভুসুক পাদের বিখ্যাত পঙক্তি --- "আপনা মাসে হরিণাবৈরী। হরিণীর মাংস ত্বক মাংসের ঋণ।"
💝¤ মৃত্যু ও মৃত্যুস্থান :- 
ছোট মেয়ে পরমেশ্বরী'র কাছে ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে জনবহুল শহর বস্টনেই মৃত্যু হয় এই মহান কবি-সাহিত্যিক কবিতা সিংহের।
🌍🌍¤ তথ্যঋণ :-
১) "আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস" --- অধ্যাপক শ্রীতপন কুমার চট্টোপাধ্যায়।
২) "কালি ও কলম" সাহিত্য পত্রিকা।
৩) ইন্টারনেটের কয়েকটি পেজ।

No comments